(এ দেশের মাটিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, লিঙ্গ তথা পরিবেশ আন্দোলন, যা বিভিন্ন সময়ে সংঘঠিত হয়েছে বা হয়ে চলেছে এ যাবৎকাল অবধি, সে সবকিছু দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমে ধারন করেছেন বেশ কিছু তথ্যচিত্র নির্মাতা। এই সব আন্দোলনকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নজরে আনার পেছনে এই তথ্যচিত্রগুলোর অবদান অনস্বীকার্য।)
লিখেছেন: দীপালোক ভট্টাচার্য

ভারতীয় তথ্যচিত্র নিয়ে এ যাবৎকাল অবধি যা আলোচনা, সমালোচনা, তার সিংহভাগই পূর্ণ দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্রের ওপরেই আলোকপাত করা হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, চলচ্চিত্র সমালোচনার জগৎটিতে ক্রমশই অবহেলিত হয়ে পড়েছে তথ্যচিত্র এবং তথ্যচিত্র আন্দোলনের বিচিত্র ধারাটি। ইতস্তত ছড়ানো কিছু প্রচার পুস্তিকা, অন্তর্জাল মাধ্যমে লিখিত প্রবন্ধ, নিবন্ধেই সীমাবদ্ধ চলচ্চিত্রের এই শাখাটি।
অথচ এ দেশের মাটিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, লিঙ্গ তথা পরিবেশ আন্দোলন, যা বিভিন্ন সময়ে সংঘঠিত হয়েছে বা হয়ে চলেছে এ যাবৎকাল অবধি, সে সবকিছু দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমে ধারন করেছেন বেশ কিছু তথ্যচিত্র নির্মাতা। এই সব আন্দোলনকে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর নজরে আনার পেছনে এই তথ্যচিত্রগুলোর অবদান অনস্বীকার্য। বিভিন্ন সময়ে নাগরিক সমাজের শাসকের বিরুদ্ধে আন্দোলনের সলতে পাকানো শুরু হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই তথ্যচিত্রগুলির মাধ্যমে। বর্তমান সময়ে নন্-ফিকশন্ গোত্রের ছবিনির্মাতারা বিষয় নির্বাচনে যে মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, এদেশের শিল্প-সাহিত্য থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, পরিবেশ, মানবাধিকার, লিঙ্গ বৈষম্য, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি সহ নানান বিচিত্র বিষয়ে তথ্যচিত্র নির্মান করে চলেছেন, তার শুরুর ইতিহাসটা কিন্তু বেশ ঘটনাবহুল।
এবারে আসুন একটু পেছন ফিরে তাকিয়ে নেওয়া যাক। দেখে নেওয়া যাক, এ দেশে তথ্যচিত্রের ঘটনাবহুল ইতিহাস। ১৮৮৮ সালে হরিশচন্দ্র সাখারাম ভাটওয়াদেকর তৎকালীন বোম্বের ঝুলন্ত উদ্যানের ওপর একটি চলচ্চিত্র নির্মান করেন। এটাকেই ভারতের প্রথম তথ্যচিত্র হিসেবে মনে করেন অনেকেই। এর পরে উনবিংশ শতকের ত্রিশের দশকে ডি.জি.তেন্ডুলকর মস্কো এবং জার্মানী থেকে চলচ্চিত্র নির্মানের কলাকৌশল অধ্যয়ন করে এ দেশের মাটিতে তথ্যচিত্র নিয়ে নানান পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। কে.এস.হিরেলেকরও একই সময়কালে তথ্যচিত্রে নিয়ে আসেন নানান আধুনিক কৃতকৌশল।
তারপর এলো সেই বহু কাঙ্খিত স্বাধীনতা। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শ্রী জওহরলাল নেহেরুর জাতির উদ্দ্যেশ্যে প্রদান করা বিখ্যাত ভাষন ‘A Tryst with Destiny’ দুটি ক্যামেরা ও শব্দ গ্রহণ যন্ত্রের মাধ্যমে ধারন করেন স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যাম্বেলস্ জে প্যাটেল। এটাকেও অনেক গবেষক তথ্যচিত্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, সেসময় সরকারি ‘film Unit’ এর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। অন্যান্য চলচ্চিত্র নির্মাতারা স্বাধীনতার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে দৃষ্যশ্রাব্য মাধ্যমে ধারন করার কথা হয়ত ভাবেনি। ঠিক এ কারনেই জে প্যাটেল স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
১৯৪৮ সালের এপ্রিলে গঠিত হয় ভারত সরকারের ‘ফিল্ম্ ডিভিশন্’। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এই সরকারী শাখাটি ‘Information Film’ ও ‘Newsreels’ প্রযোজনা ও প্রদর্শনে একটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে, এটা অনস্বীকার্য। থিয়েটারগুলিতে পূর্ণদৈর্ঘের চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আগে Film Division’ নির্মিত তথ্যচিত্রগুলির দেখানো বাধ্যতামূলক ছিল। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫০ – এই এক বছরেই ৯৭ টি তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছিল ‘Film Division’ এর তত্ত্বাবধানে। সে ছবিগুলো আবার পাঁচটি প্রাদেশিক ভাষায় ‘ডাবড্’ হয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সারা দেশে। প্রেক্ষাগৃহের চার দেওয়াল অতিক্রম করে প্রান্তিক অঞ্চলের আমজনতা দর্শকের সুযোগ হয়েছিল সেসব তথ্যচিত্র চাক্ষুস করার। স্বাধীন ভারতের প্রথম লগ্নে ‘Film Division’ এর প্রযোজনায় উল্লেখযোগ্য তথ্যচিত্রগুলি হল এস.এন.এস শাস্ত্রী’র ‘I Am 20’, শুকদেব পরিচালিত ‘India 1967’, এম. এফ. হোসেনের ‘Through the Eyes of a Painter’ প্রভৃতি। তাৎপর্যপূর্ণভাবে, বর্তমান সময়ে ‘Film Division’ এশিয়ার সমস্ত দেশ গুলোর মধ্যে সব চেয়ে বেশী সংখ্যক স্বল্প দৈর্ঘের চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রযোজনা করেছে। সেসব ছবি দেশ বিদেশের চলচ্চিত্র উৎসবগুলিতে প্রশংসিত ও পুরষ্কৃত হয়েছে, এ কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
তবে ‘Film Division’ ছাড়াও বেসরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগেও প্রচুর তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে বিগত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে। এ প্রসঙ্গে পঞ্চাশের দশকে ‘Burbah Shell’ নামক প্রযোজনা সংস্থাটির নাম উল্লেখ না করলেই নয়। শুধু নির্মানে আধুনিক কৌশল ব্যবহারই নয়, নির্মিত ছবিগুলির বিপণনেও নানান অভিনবত্ব এনেছিল এই সংস্থাটি। কানাডার চিত্রপরিচালক জেমস্ বেভেরিজ এই সংস্থার হয়ে অনেক তথ্যচিত্র নির্মান করেন।
১৯৭৮ সালে মুক্তি পায় বিনোদ চোপড়া পরিচালিত ‘An Encounter with Faces’ তথ্যচিত্রটি। বম্বের পথ শিশুদের নিয়ে নির্মিত এই ছবিটি পারি দেয় অস্কারে। মিলান চলচ্চিত্র উৎসবেও পুরষ্কৃত হয় বিনোদ চোপড়া পরিচালিত এই তথ্যচিত্রটি। প্রথাগত ধারাভাষ্য ছাড়াও পথশিশুদের সাথে নির্ভেজাল আলাপচারিতা এই ছবির বিশেষ সংযোজন।
বিগত শতকের নব্বইয়ের দশকে আমরা প্রত্যক্ষ করি ডিজিটাল বিপ্লব। তার ছোঁয়া এসে লাগে তথ্যচিত্র নির্মানেও। চিত্রগ্রহণ ও সম্পাদনার মত ব্যয়বহুল দিকগুলো ক্রমশই চলচ্চিত্র নির্মাতাদের হাতের নাগালে চলে আসল ধীরে ধীরে। তার সাথে প্রথমে দূরদর্শন ও তারপর স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলির আত্মপ্রকাশ এ দেশের তথ্যচিত্র নির্মানকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল, সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯৯৫ সালে ‘ডিসকভারি’ ও ১৯৯৮ সালে ‘ন্যাশেনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেল’ আসার পর তথ্যচিত্রের প্রথাগত ধারনা বদলে গেল। বিশ্বের নানান প্রান্তের ডকু ছবি করিয়েদের পাশাপাশি এ দেশে নির্মিত তথ্যচিত্রগুলো দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়েছে, এ কথা হলফ করেই বলা যায়।
তথ্যচিত্র নির্মানকে পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত করতে যাঁর অবদান আজও স্মরণীয়, তিনি হলেন আনোয়ার জামাল কিডাই। তাঁর উদ্যোগে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় Mass Communication Research Centre’ (MCRC). প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আর্থিক সহায়তায় শুরু হলেও MCRCকে ধীরে ধীরে দেশ বিদেশের নানান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাহায্য করতে শুরু করে। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তথ্যচিত্র নির্মানের পাঠক্রম শুরু হয় এই সংস্থার উদ্যোগে। সেখান থেকে ডিগ্রি লাভ করে ছাত্রছাত্রীরা চমকপ্রদ তথ্যচিত্র নির্মান করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে দেশ বিদেশের দর্শকদের।
এবারে দেখে নেওয়া যাক এদেশে নির্মিত কিছু তথ্যচিত্র যেগুলো সারা বিশ্বের দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। ইংল্যান্ডের ওয়াইল্ডস্ক্রীন ফেস্টিভ্যালে দু দুটো গ্রীন অস্কার বিজয়ী মাইক পান্ডের ‘Rogue Elephants of India’ এবং ‘Shore Whale Sharks in India’ ছবিদুটোর উল্লেখ না করলেই নয়। ‘Shore Whale Sharks in India’ নির্মান করতে প্রায় তিন বছর সময় লেগেছিল এবং এই ছবিটির অভিঘাত এমনটাই ছিল যে এদেশের উপকূলে হাঙ্গর শিকার নিষিদ্ধ করতে বাধ্য হয় সরকারী কক্তৃপক্ষ আর হাঙ্গর শিকারী সাধারণ জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের নতুন দিশা দেখানো হয় নানান মহল থেকে।
আনন্দ পটবর্ধন, সঞ্জয় কক, অমর কানোয়ার, রাজেশ শর্মা প্রমুখ তথ্যচিত্র নির্মাতাও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁদের চলচ্চিত্র নির্মানশৈলীর মুনশিয়ানার জন্য। ১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তানে পরমানু বিস্ফোরণের পরে এই উপমহাদেশের বুকে সংঘঠিত বিভিন্ন আন্দোলনের ওপর নির্মিত আনন্দ পটবর্ধনের ‘War and Peace’ (২০০২) তথ্যচিত্রটি বিজ্ঞজনের প্রশংসা কুড়িয়েছে। দীর্ঘ পঁচিশ বছর ধরে পটবর্ধন মানবাধিকার, ধর্মীয় মৌলবাদ, বিশ্বায়নের নেতিবাচক দিকগুলির মত নানান স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে একের পর এক তাক লাগানো তথ্যচিত্র নির্মান করেছেন। অন্যদিকে সঞ্জয় কক তাঁর ছবিতে নির্মান ও বুনন নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন। ‘তাঁর Land, My Land, England’ (১৯৯৩), ‘A House and a Home’ (১৯৯৩), ‘Geeli Mitti’ (১৯৮৫) সারা বিশ্বের চলচ্চিত্রমোদী দর্শকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অমর কানোয়ার এবং রাজেশ শর্মাও নানান বিচিত্র বিষয়ের ওপর তথ্যচিত্র নির্মান করে চমকে দিয়েছেন দর্শকদের। কানোয়ারের ‘A Night of Prophecy’ (২০০২) ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় কবি শিল্পীদের কবিতা ও সঙ্গীতকে এক অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। অন্যদিকে ২০০২ সালে গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরে এদেশের দক্ষিনপন্থী রাজনীতি বাঁকবদলের এক জীবন্ত দলিল হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে রাজেশ শর্মার ‘Final Solution’ (২০০৩) তথ্যচিত্রটি।
আসলে বিগত কয়েক দশকে যেসব তথ্যচিত্র নির্মিত হয়েছে, সেগুলির অধিকাংশই দর্শকদের মধ্যে স্পষ্টতই এক ধরনের অভিঘাত সৃষ্টি করতে পেরেছে, এটা হলফ করেই বলা যায়। বক্স অফিসের লাভের অঙ্ক না কষে, বিনোদোনের প্রচলিত রাস্তায় না হেঁটে এই তথ্যচিত্রনির্মাতারা শুধুই এক ভিন্ন তাগিদ থেকে তৈরি করেছেন একের পর এক তাক লাগানো ছবি। দর্শক আনুকুল্যের তোয়াক্কা না করা এই ছবি করিয়েদের কুর্ণিশ না জানিয়ে উপায় নেই। আবার তাঁদের ছবিতে বিরুদ্ধ মত খুঁজে পেয়ে সেখানে কাঁচি চালাতে উদ্যত হয়েছে শাসকগোষ্ঠী। আবার তথ্যচিত্রে গায়ে কাঁচি চালানোর বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে পিছপা হয়নি তথ্যচিত্র নির্মাতারা। ২০০৩ সালে মুম্বাই ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে অংশগ্রহণকারী তথ্যচিত্রগুলির জন্য সেন্সর শংসাপত্র আবশ্যিক করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নামেন তিনশোরও বেশি তথ্যচিত্র নির্মাতা। সম্মিলিত প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে সরকার অবশেষে পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং উল্লিখিত চলচ্চিত্র উৎসবে সেন্সর শংসাপত্র আবশ্যিক করা থেকে বিরত থাকতে হয় কতৃপক্ষকে।
আর একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। বর্তমান সময়ে তথ্যচিত্রের ব্লগাহীন জনপ্রিয়তার পেছনে অন্তর্জাল নির্ভর স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর গুরুত্বকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। বিভিন্ন চমকপ্রদ ও অভিনব বিষয়ের ওপর এপিসোডের পর এপিসোড ধরে চলতে থাকা এই ডকু সিরিজগুলোয় বুঁদ এ প্রজন্মের দর্শককুল। হয়ত এই জনপ্রিয়তার পেছনে অজানা, অচেনা জগৎের প্রতি মানুষের সহজাত দুর্নিবার আকর্ষণ বা চেনা জগৎকে বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গিতে আবিষ্কারের নেশা কাজ করে। তার সাথে উন্নত মানের চিত্রগ্রহণ, সাউন্ড ডিজাইন এবং চলচ্চিত্র নির্মানের আধুনিক কৌশল এই দৃশ্যশ্রাব্য মাধ্যমটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে অনেকাংশেই অনুঘটকের কাজ করেছে, এ কথা হলফ করেই বলা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ের ‘Wild Wild Country’ এবং ‘The Last Dance’ এর মতন ডকু সিরিজগুলি চলচ্চিত্রের প্রথাগত একরৈখিক বর্ণণামূলক আখ্যানকে একটা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। আখ্যান বুননে নিরীক্ষামূলক কৌশল অনেকাংশেই নতুন প্রজন্মের দর্শকদের টানতে সমর্থ হয়েছে। অন্তর্জাল মাধ্যমে ছবি দেখার প্রচলন যখন ছিল না, সেসময় তথ্যচিত্র নির্মানের প্রাথমিক শর্তই ছিল সামাজিক বদল ও বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে দর্শকদের অবহিত করা। তথ্যচিত্রে গল্প বুনন (story telling) সেখানে ছিল কিছুটা ব্রাত্য। আবার বিষয়বস্তুর দিক থেকেও সাম্প্রতিক সময়ের ডকু সিরিজগুলিতে এসেছে অনেক অভিনবত্ব। যেমন, এ দেশের শিক্ষিত উচ্চবিত্ত সমাজের দেখাশোনা করে বিয়ের মত বিষয় উঠে এসেছে ‘Indian Matchmaking’ ডকু সিরিজে। সেখানে আপাত আপাত লঘু চালে পরিচালক তুলে এনেছেন নানান উচ্চবিত্ত সমাজের নানান সূক্ষ্ম সমীকরণ।
তাই, তথ্যচিত্র আগামীদিনে কোন পথে সওয়ারি হবে, সে উত্তর নিহিত আছে ভবিষ্যতের গর্ভেই। এদেশের তথ্যচিত্র নির্মানের যে ঘটনা বহুল ইতিহাস আমরা প্রত্যক্ষ করেছি, সেখান থেকে নানা পথ অতিক্রম করে আজকের ডকু সিরিজ বা সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয় শর্ট ডকুকে হয়ত ভবিষ্যতে অন্য আঙ্গিকে বদলে দেবে ভবিষ্যতের ডকু নির্মাতারা। আর যে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, চলচ্চিত্র আর তথ্যচিত্রের মাঝের বেড়াটা একটু একটু করে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ছে দিন দিন। নানান পরীক্ষানিরীক্ষায় আরো সমৃদ্ধ হোক ভবিষ্যতের তথ্যচিত্র নির্মান, এটাই আশা সচেতন দর্শকের।